সারাংশ
২০২২ সালের শেষ নাগাদ এবং ২০২৩ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নিম্নমুখী প্রবণতা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে: দুর্বল ধারণক্ষমতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হ্রাস, রাজস্ব ঘাটতি ও রপ্তানি আয়ে অস্থিরতা এসেছে। তবে, বিশ্বব্যাংক ও বিভিন্ন বিস্লেষকের সুপারিশ অনুযায়ী, দৃঢ় নীতিগত সংস্কার এবং সমন্বয় করলে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা সুস্পষ্ট।
মূল পয়েন্টসমূহ
- FY24-এ GDP প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৮% এবং FY25-এ তা ৬.০% হতে পারে (বিশ্বব্যাংক)
- শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন ও ব্যাংকিং-খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে
- ঋণখাত, মূল্যস্ফীতি, শিল্পে প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানিতে অস্থিরতা বড় চ্যালেঞ্জ
- তিন দফা জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত এবং সংস্কারমূলক সুপারিশ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক
- নীতিগত সংস্কার ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে পারে অর্থনীতি
২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা ও সংকটের চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, FY24-এ মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৮% এবং FY25-এ তা বেড়ে ৬.০% এ পৌঁছাতে পারে। ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা, শিল্প উৎপাদন কমে যাওয়া, বৈদেশিক রিজার্ভের ঘাটতি এবং রপ্তানি খাতে অনিশ্চয়তা অর্থনীতিকে চাপে রেখেছে।
শেয়ারবাজারেও দরপতন একটি গুরুতর সংকেত হিসেবে ধরা পড়েছে: ২০২৪ সালের অক্টোবরে গোটা বাজারে মূলধন কমে যায় দশ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিশেষজ্ঞ ড. সুমন আহমেদ জানান, “অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে হলে স্বচ্ছতা, দুর্নীতি-নিয়ন্ত্রণ ও টেকসই খাতে বিনিয়োগ জরুরি।”
বিশ্বব্যাংক, HSBC এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অনুমানও এই চিত্রের সাথে মিল রয়েছে। HSBC-এর পূর্বাভাসে FY25-26 অর্থবছরে GDP প্রবৃদ্ধি ৬.১% পর্যন্ত পৌঁছানোর প্রত্যাশা করা হয়েছে। তবে, উন্নয়নের এ গতি বজায় রাখতে হলে দেশের ব্যাংকিং কাঠামোর স্থিতিশীলতা ও রাজস্ব ঘাটতি কমাতে হবে। জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সুশাসন ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দ্রুততর অগ্রগতি বহন করতে পারে—বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “দ্রুত সংস্কার ও দক্ষ ব্যবস্থাপনাই পারে সংকট মোকাবেলা করতে।”
তবুও, কিছু ইতিবাচক উদ্যোগও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০২৪-এর মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ক্রলিং পেগ’ এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম চালু করেছে, যাতে রিজার্ভের স্থিতিশীলতা ও বৈদেশিক ঋণের বোঝা কিছুটা হ্রাস পায়। এফডিআই আকর্ষণের চেষ্টা, ব্যাংকিং খাতের পুনর্গঠন এবং উদ্ভাবনী কৃষি উৎপাদন সম্প্রসারণ আশার আলো দেখাচ্ছে।
সার্বিকভাবে, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দোলাচলে অর্থনীতির বর্তমান সংকটকে কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার, বেসরকারি খাত ও আন্তর্জাতিক সংস্থার যৌথ কার্যকরী উদ্যোগ খুবই জরুরি। নীতিনির্ধারক ও বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তবসম্মত সংস্কার এবং দক্ষ পরিচালনা থাকলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুত্থান সম্ভব।